‘Life Doesn't End Here’

“Life doesn’t end here. We have to go on. Life cannot end here. No matter how difficult, we must stand back up. We only have two options: either allow anger to paralyze us and the violence continues, or we overcome and try our best to help others. It’s our choice. Let us please maintain respect. My warmest regards to everyone. It’s been a most amazing and rare experience. We’ll see each other again soon because life does not end here.”- Andres Escobar


Andres Escobar| Pinterest

লাইফ ডাজেন্ট এন্ড হেয়ার! কিন্তু আসলেই কি তাই? ঘটনাগুলো আমাকে অনেক ভাবায়। কারণ, ফুটবল আমাদের যেমন আনন্দ দেয় আবার তেমনি এমন কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দেয় যা ফুটবল ভক্তরা মনে রাখে সারাজীবন। ভাবতে ভাবতেই লিখা শুরু। উপরের কথাগুলো এক ভদ্রলোকের এপোলোজি। 

ভদ্রলোকটি ছিলেন আন্দ্রে এসকোবার। গত দু'দিন আগেই পার হয়েছে মৃত্যুবার্ষিকী। 'দ্যা জেন্টেলম্যান' খ্যাত ডিফেন্ডার যাকে স্থানীয় ভাষায় ডাকা হতো 'এল কাবালেরো দেল ফুটবল'। কলম্বিয়া, ল্যাটিন আমেরিকার অন্যতম পরাশক্তি দলকে বলা হয় 'লস ক্যাফেটেরস' বা কফি উৎপাদনের দেশ। তবে ফুটবলে নিঃসন্দেহে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়েদের পরই হয়তো কলম্বিয়ার নাম চলে আসবে।

১৯৬৭ সালে জন্ম নেন আন্দ্রে এসকোবার। বাবা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ফুটবল খেলার সুযোগ করে দিতেন, ভাই ছিলেন ফুটবলার। সে সুবাদে এসকোবারও ফুটবলে মনোনিবেশ করেন। ৮৮' তে কলম্বিয়া জাতীয় দলে যোগদান করলেও ৮৯' এর কোপা আমেরিকায় তার খেলা দেখে ফ্যান বনে যান অনেকেই। ছিলেন শান্ত স্বভাবের, জেন্টলম্যান। 

তো যাই হোক, ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ ছিলো যুক্তরাষ্ট্র। মাত্র চব্বিশটি দল সেখানে কম্পিট করে। কলম্বিয়া সেই চব্বিশটি দলের মধ্যে জায়গা করে নেয়। বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং ম্যাচগুলোতে সাফল্য দেখে কলম্বিয়ানরা অনেক আশা দেখাতে শুরু করে। বিশ্বকাপে ভালো কিছুর আশা নিয়ে প্রথম ম্যাচে রোমানিয়ার সাথে ৩-১ গোলে হেরে গেলে কিছুটা মাটিতে পা নেমে আসে কলম্বিয়ানদের। সামনে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ম্যাচে পাহাড় সম চাপ! জিততেই হবে। নাহলে যে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ হয়ে পাড়ি জমাতে হবে নিজেদের দেশে। 

খেলার ৩২ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য থাকে ইউএসএ-কলম্বিয়া ম্যাচ। ঠিক ৩৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের মাথায় পুরো গ্যালারি নিস্তব্ধ! আন্দ্রে এসকোবার যিনি একনামে ভদ্রলোক শান্ত স্বভাবের এবং ডিফেন্সের অতন্দ্র প্রহরী, যার কাজ গোল বাঁচানো তিনিই কিনা নিজেদের জালে গোল দিয়ে বসলেন! এক-শূন্য গোলে পিছিয়ে পড়া কলম্বিয়ার সামনে চ্যালেঞ্জটা আরও কঠিন হয়ে গেলো। খেলায় ২-১ গোলে হেরে বিদায় নেয় কলম্বিয়া। ম্যাচটি ছিলো ২২ শে জুন। হারার দায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিজের অনুশোচনা জানান কলম্বিয়ান এই ডিফেন্ডার। 

তবে! তবে কাহিনী এখানে শেষ হলে হয়তো আন্দ্রে এসকোবারকে আমরা আজও ফুটবলের সাথে সংযুক্ত থাকতে দেখতাম। কলম্বিয়ান সমর্থকদের মনে এতটাই ক্ষতের জন্ম হয় যে এসকোবার হয়তো নিজেও ভাবেন নি কত বড় অপরাধ তিনি করেছেন।

Andres Escobar| Shaun Brotterill/ALL SPORTS

জুলাই ২, ১৯৯৪। 

এইতো মাত্র দশদিন হলো গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছেন। এসকোবার তার বন্ধুদের নিয়ে নিজগৃহের কাছেই একটি বারে আড্ডা দিতে বের হোন। সেখান থেকে বন্ধুরা বিদায় নিলে রাত আনুমানিক তিনটার দিকে পার্কিং লটে এসকোবার একা পড়ে যান। ঠিক তখনই অপরিচিত কয়েকজন এসে তার সাথে তর্কে জড়িয়ে যায়। তারা সেই অনাকাঙ্ক্ষিত গোলটি নিয়ে তর্ক শুরু করে। এক পর্যায়ে আন্দ্রে এসকোবারকে তারা গুলি করতে শুরু করে। 

গোল! গোল! 

একে একে ছয়টি গুলি করা হয় তাকে। প্রত্যেকটা গুলির সাথে তারা 'গোল' 'গোল' বলে চিৎকার করে ঠিক যেমনটা এসকোবারের আত্মঘাতি গোলের পর সেদিনের সেই কমেন্টেটর করেছিলেন! 

কি বুনো উল্লাস! কি মর্মান্তিক! কি করুন! 

তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ৪৫ মিনিটের বেশি আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। তার শেষকৃত্যে প্রায় দেড় লাখ মানুষের সমাগম হয়। কলম্বিয়ার ছয়জন ফুটবলার পদত্যাগ করেন। ২০০২ সালে একটি স্ট্যাচুও করে রাখা হয় মেডেলিনে তার জম্নস্থানে। শাস্তি পেয়েছে অপরাধীরাও। কিন্তু তাতে কি এসকোবার ফিরে এসেছেন?

আক্ষেপ! স্রেফ আক্ষেপ! একটি গোল? সেদিন আরেকটি গোল যদি কলম্বিয়া দিতে পারতো? কিংবা এসকোবার যদি আরেকটু সতর্ক থাকতেন! খুব আফসোস হয়। একটি গোল এভাবে প্রাণ কেড়ে নিতে পারে? ফুটবলে এমনও করুণ দৃশ্য থাকতে পারে?

আমরা ফুটবল ভক্ত। সুন্দর ফুটবলের পূজারী। আমার দেশ জিতলে আমি উল্লাসে ফেটে পড়বো। আনন্দে আত্মহারা হবো। নাচবো, গাইবো। কিন্তু হারলে? হারলে আমি কষ্ট পাবো। প্রিয় দেশ, প্রিয় মাতৃভূমির হার সহ্য হবে না। বুকে পাহাড়সম কষ্ট নিয়েও পরের ম্যাচ দেখতে বসে যাবো ঠিক যেমনটা আমরা প্রিয় দলকে সাপোর্ট করতে গিয়ে করি। 

ফুটবল তো আনন্দের একটা খোঁড়াক মাত্ররে ভাই! এটা কখনো আরেকজনের মৃত্যুর কারণ হতে পারে না। কখনোই না। বরং এইযে মেসি, রোনালদো কিংবা কিছুদিন আগের রোনালদিনহো, রোনালদো নাজারিও, ব্যাকহাম উনারা তো আমাদের বেঁচে থাকার আশ্রয়স্থল। যুগে যুগে তারকাখ্যাত খেলোয়াড়েরা না আসলে আমরা ফুটবল ভালোবাসতাম কি করে? 

মেসির রাইভাল দেশ ব্রাজিল। কিন্তু সেদিন ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া পিঠে মেসির ট্যাটু আকা মানুষটা যাকে মেসি তার নিজের অটোগ্রাফ পিঠে এঁকে দেন, সেই মানুষটা কি ব্রাজিলের ছিলেন না? কিংবা সেই ছোট্ট বাচ্চাটা যার কান্না পুরো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে কয়দিন আগে সে কি ব্রাজিলের নয়? এইতো সম্প্রতি। 

মেসিকে এক পলক দেখে আনন্দাশ্রু ধরে রাখতে পারেনি (আর্জেন্টিনা-বলিভিয়া ম্যাচের পর, ব্রাজিল)

কিংবা ধরুন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ফ্যান কি শুধুই পর্তুগালের? এর উত্তর সিম্পল। উনারা বরং আমাদের বেঁচে থাকার উৎস। ফুটবল ভালোবাসার উৎস। কি করে পারে মানুষ এই ফুটবলের জন্য একজনের জীবন শেষ করে দিতে? আজ ভুল করেছিলেন এসকোবার, কাল হয়তো বিশ্বকাপ জিতিয়ে নায়ক বনে যেতেন তিনিই! একটু অপেক্ষাও কি সহ্য হলো না কলম্বিয়ানবাসীর? কি অদ্ভুত! কি মর্মান্তিক! জীবন কি এখানেই থেমে থাকে? কিংবা থাকার মত? থাকে না। উই মুভ অন। ঠিক যেমনটা এসকোবার লিখেছিলেন, 'Life doesn't end here'



Comments

Popular Posts